মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১১) বাংলা সাহিত্যের এক সব্যসাচী ও যুগন্ধর লেখক-ব্যক্তিত্ব। উনিশ শতকে দোভাষী পুথির জগৎ অতিক্রম করে মশাররফই প্রথম বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার মূলধারার সঙ্গে মুসলিম সমাজের যোগসূত্র রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক-পর্বে তিনিই ছিলেন প্রথম ও প্রধান মুসলিম সাহিত্যসেবী। কেবল মুসলিম সমাজেই নয়, উনিশ শতকের সামগ্রিক সাহিত্যপ্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতেও তিনি বিশিষ্ট ও উল্লেখযোগ্য লেখক হিসেবে চিহ্নিত। ধ্রুপদি গ্রন্থ ‘বিষাদ-সিন্ধু’র লেখক হিসেবে মূলত পরিচিত হলেও তাঁর অন্যান্য রচনাও বিষয়, ভাষা ও শিল্পগুণে বিশিষ্ট।
যেহেতু বাঙালি মুসলমানের বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তেমন কোনো যোগ ছিল না, তাই মশাররফের ‘বিশুদ্ধ বাঙ্গালা ভাষা’র চর্চা প্রতিবেশী হিন্দুসমাজকে বিস্মিত, মুগ্ধ ও অভিভূত করেছিল। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র ‘জমীদার দর্পণ’ নাটক প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘অনেক হিন্দুর প্রণীত বাঙ্গালার অপেক্ষা, এই মুসলমান লেখকের বাঙ্গালা পরিশুদ্ধ’। প্রকৃতপক্ষে মশাররফের রচনার বিষয়-বৈচিত্র্য, প্রকাশ-নৈপুণ্য, সমাজমনস্কতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে সাহিত্যশিল্পী হিসেবে একটি স্বতন্ত্র মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মশাররফচর্চার এই প্রচলিত বৃত্ত ভেঙে অজ্ঞাত-দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য তথ্যদলিলের সহায়তায় মশাররফকে নতুনভাবে আবিষ্কার ও উপস্থাপিত করেছেন ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী। সেই চিন্তনের সারসংগ্রহই এই বই— ‘আমার মীর মশাররফ’।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত